রোজায় ক্লান্তিহীন থাকার উপায়

রোজাকে আরবি ভাষায় সাউম বা সাওম (আরবি صوم স্বাউম্‌, অর্থঃ সংযম) বলা হয়, যার শাব্দিক অর্থ চুপ থাকা, বিরত থাকা।

 ইসলামী পরিভাষায় রোজার প্রকৃত অর্থ ও মর্ম হচ্ছে, নফসের খাহেশ ও আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সংযত রাখা এবং লোভ-লালসা থেকে নিজের দেহ-মন-প্রাণকে বিরত রাখা। সাধারণত নফসানী খাহেশ এবং মানবিক লোভ-লালসা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিকাশস্থল হচ্ছে তিনটি। যথা- খাদ্য, পানীয় এবং নারী। শরীয়ত মোতাবেক একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই তিনটি উপকরণ থেকে  দৈহিক ও আত্মিক সম্পর্ক সংযত ও সুসংহত রাখার নামই  রোজা।

বর্তমানে সারাদেশে গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। আর এইদিকে চলছে রোজার মাস। এই গরমে সারাদিন রোজা রাখার কারনে  অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। রোজায় সারাদিন পানি পান থেকে বিরত থাকার কারনে শরীরে পানি ঘাটতি বা পানিশুন্যতা দেখা দেয়।

 


ই পানিশুন্যতা দূর  না হলে শরীর সহজেই দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর এই ক্লান্তি দূর করতে না পারলে রোজা  রাখাও কষ্টকর হবে। জীবিকানির্বাহের জন্য, রোজা রেখেও আমাদের  বিভিন্ন শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়।তাই এই সময় শরীর সুস্থ ও সবল রাখা  অত্যন্ত জরুরি।


 তাহলে রোজা রেখে সারাদিন কিভাবে কর্মক্ষম ও সতেজ থাকা যায় ? চলুন জেনে নেওয়া যাক, 
রোজায় ক্লান্তিহীন, কর্মক্ষম ও সতেজ থাকার জন্য আমাদের যে কাজগুলো করতে হবে -


রুটিন তৈরি করে নিন

রোজায় সারাদিন কি কি কাজ করবেন ,তার একটি রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। সেহেরির নির্দিষ্ট সময় পর নামাজ পড়ে হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারেন তবে অবশ্যই দীর্ঘসময় ঘুমানো যাবে না। কারণ এতে মাথাব্যাথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিজেকে সতেজ রাখতে ও অলসতা দূর করতে  সেহেরি খাওয়ার পর হালকা ব্যায়াম ও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।এছাড়া কাজ অনুযায়ী দিনের সময়গুলো ভাগ করে নিন,এতে নির্দিষ্ট সময়ের কাজ সময়ে শেষ হবে ও  বাড়তি পরিশ্রম  ও সময় সাশ্রয় হবে।


পর্যাপ্ত পানি পান করুন

রোজায় ক্লান্তিহীন থাকার জন্য বেশি জরুরি হলো পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা। কারণ এই পানির ঘাটতির জন্যই পানিশুন্যতা দেখা দেয় ও শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে ।তাই ইফতার থেকে সেহেরির সময়টাতে পর্যাপ্ত পানি বা তরল ( যেমনঃ শরবত,খাবার স্যালাইন,জুস  অথবা ডাবের পানি ইত্যাদি ) পান করা আবশ্যক।সেসব খাবারসমূহ বেশি খেতে হবে যাতে পানির পরিমাণ বেশি।


খাবারের দিকে নজর রাখুন 

রোজায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে,তা হলো খাবার।সেহেরি ও ইফতারের সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সেহরিতে চা এবং কফি পান করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এসব পানি হল মূত্রবর্ধক এবং এতে ক্যাফিন থাকে। এতে শরীর থেকে দ্রুত পানি বেরিয়ে যায়।
সেহরিতে ভাত, রুটি, মসুর ডাল, শাকসবজি বেশি পরিমাণে খান। এ খাবারগুলো পাকস্থলীতে পরিপাক হতে অনেক সময় লাগে।এসময় ভাজা- পোড়া, অতিরিক্ত তেল- মশলাযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। এসব খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, বদ হজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাতের খাবারে ভুনা মাংস, পোলাও জাতীয় খাবার রোজা রেখে না খাওয়াই ভালো, এগুলো খেলে বেশি পানির তেষ্টা পায় । তাই রোজায় সবজি, ফলমূল ও ফাইবারযুক্ত , তরল ও স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খেতে হবে।


পর্যাপ্ত ঘুমানো

রোজায় সারাদিনের ক্লান্তি ও দূর্বলতার একটি মুল কারন হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমানো।বছরের অন্যান্য সময়গুলোতে রাতে দেরিতে বা রাত জাগলেও ,রোজার এই সময়টাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।ঘুমানোর সময় মোবাইল বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসগুলো দূরে রাখতে হবে।প্রয়োজনে ঘুমানোর সময় আলার্ম দিয়ে ঘুমানো যেতে পারে যাতে সেহেরির সঠিক সময়ে উঠতে পারেন।কারন কোনো কারনে যদি সেহেরি খাওয়া বাদ পড়ে তাহলে সারাদিন ক্লান্তি অনুভব হবে ও রোজা রাখা কষ্টকর হবে।


আশা করি আজকের "রোজায় ক্লান্তিহীন থাকার উপায়" সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে।যদি ভালো লেগে থাকে বা এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে দেওয়া কমেন্টবক্সে জানাতে ভুলবেন না। এইরকম আরো ইনফরমেটিভ পোস্ট পড়তে Janbebd.Online এর সাথেই থাকুন,ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেননি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানবে বিডি ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url