Ads 728×90
Ads 728×90
বর্তমান যুগ হলো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমরা দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময় তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভর করি।কিন্তু আমরা যেমন বিভিন্নভাবে তথ্য প্রযুক্তির সুফল ভোগ করি তেমনিভাবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
আজকে আমরা তেমনি একটি ক্ষতিকর দিক Cyberbullying সম্পর্কে জানব।চলুন আগে জেনে নিই,সাইবার বুলিং কি।
সাইবার বুলিং (Cyberbullying) বলতে বিভিন্ন ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল, মোবাইল এসএমএস এ বিশেষত অপ্রীতিকর বার্তা প্রেরণ করে কাউকে হয়রানি কিংবা ভয় প্রদর্শন করাকে বোঝানো হয়।
অর্থাৎ দুজন ব্যাক্তির মধ্যে যখন ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হয় তখন অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে অপরজনকে আক্রমণ করাই হলো সাইবার বুলিং।
এ ধরণের কার্যক্রমের মধ্যে ডিজিটাল মধ্যমে কারো বিরুদ্ধে গুজব রটানো, হুমকি দেওয়া, যৌন মন্তব্য করা, একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা কিংবা ঘৃণামূলক মন্তব্য করা ইত্যাদি বিষয় গুলো অন্তৰ্ভুক্ত।
বর্তমানে ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতার কারণে আমরা অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেই দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করি। ফলে এই সময়ে অনলাইনের বিভিন্ন পরিচিত ও অপরিচিত বন্ধুদের সাথেই আমরা বেশি আড্ডা দেই ।
এইযে অনলাইনে এত এত মানুষদের সাথে আমরা পরিচিত হয়, বন্ধুত্ব হয়। তাদের কাউকেই কিন্তু আমরা আগে থেকে চিনিনা। ফলে তাদের মধ্যে কে কি রকম ,তাদের উদ্দেশ্য ভালো নাকি খারাপ, সেটাও আমরা বুঝতে পারিনা। ফলে দেখা যায় তাদের কাছ থেকেই আমরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হই।
ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে মানুষ বিভিন্নভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে পারে। চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক সাইবার বুলিং কত প্রকার?
নিচে কিছু সাধারণ সাইবার বুলিং নিয়ে আলোচনা করা হলো:
হয়রানি: যখন কেউ হয়রানির শিকার হয় তখন তাকে অনলাইনের মাধ্যমে অপমানজনক কথা, কটু কথা বা ভয়-ভীতি দেখানো হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি মানুষ মোবাইল ফোন, টেক্সট বা ইমেইলের মাধ্যমেও হয়রানির শিকার হতে পারে।
Doxing: ড্রক্সিং হলো এমন একটি বিষয় যেখানে কেউ একজন অন্য একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য যেমন মোবাইল নাম্বার, বাসার ঠিকানা, ব্যাংকের তথ্য তার অনুমতি ছাড়াই কোনো পাবলিক ফোরামে শেয়ার করে দেয়। ড্রক্সিং এর প্রভাবে মানুষ মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পরে।
Cyberstalking: সাইবারস্ট্যাকিং এমন একটি অপরাধ যেখানে অপরাধি ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল, মেসেজিং বা বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে ভিকটিমকে হয়রানি করা করে। এরা অনেক সময় নিজেদের নাম গোপন করে যোগাযোগ করে।
Revenge Porn: যখন কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বা যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয় বা অনুমতি ছাড়াই কোন নির্দিষ্ট সাইটে শেয়ার করা হয় তখন এটাকেই রিভেঞ্জ পর্ন বলা হয়। সাধারণত এই ছবিগুলো তার কোন প্রাক্তন পার্টনারা দ্বারা ছড়িয়ে পরে। এটা সাধারণত তার সম্মান নষ্ট করা বা বিভিন্ন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
Swatting: এটাকে Prank কলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এখানে কোন একজন নাম পরিচয়হীন অজ্ঞাত ব্যক্তি কোন সশস্ত্র বাহিনীকে ফোন দেয়। এরপর তাদেরকে বলে ওমুক জায়গায় খুব সমস্যা হয়েছে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে সেখানে আসতে বলে। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে গিয়ে দেখা যায় কোন সমস্যাই হয়নি।
Corporate Attacks: কর্পোরেট জগতে কোন ওয়েবসাইটকে অকার্যকর করে তুলতে ওয়েবসাইটিতে ব্যাপক তথ্য পাঠাতে এই কর্পোরেট অ্যাটাক ব্যাবহার করা হয়। কর্পোরেট অ্যাটাকের ফলে জনগনের কাছে আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে, ব্যাবসার সুমানমকে নষ্ট করে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায় ধস ও নামতে পারে।
অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং: এক্ষেত্রে বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট এবং পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অপমানজনক বা ক্ষতিকারক বা আর্থিক সহায়তার বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার হচ্ছে।
ফেইক আইডি: কোন ব্যাক্তি বা ব্র্যান্ডের খ্যাতি নষ্ট করার বা এসব ব্র্যান্ডকে ব্যাবহার করে সুবিধা নেবার জন্য বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ফেইক আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়। ভিকটিমের পাবলিক করা সকল ছবিগুলো প্রমাণস্বরূপ কাজে লাগাতে পারে।অনলাইনে নিজের পরিচয় গোপন রেখে অন্যের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যদি খারাপ কাজ করে থাকে কিংবা বিভ্রান্ত মুলক কর্মকাণ্ড করে, তাহলে যে ব্যক্তিটির পরিচয় ব্যবহার করা হয় সে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
Slut Shaming: এটা সাধারণত মৌখিকভাবে এই বুলিংটা করা হয়। যখন কেউ কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে বা অপমান করার উদ্দেশ্যে কিছু বলা হয় এটাকেই Slut Shaming বলা হয়। এটা আরো বেশি হয় যখন কেউ কারোর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জরিয়ে পরে এবং এটা পাবলিক হয়ে যায়।
গ্রুপে অ্যাড: কেউ যদি আপনার অনুমতি ব্যতীত কোন বাজে গ্রুপে বারবার এড করতে থাকে সেটিও সাইবার বুলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
কমেন্ট বক্স/ফেসবুক স্টোরি: কেউ যদি মাত্রাতিক্ত ভাবে আপনার পোস্টের কমেন্ট বক্সে কিংবা ফেসবুক স্টোরির রিপ্লাইয়ে বাজে মন্তব্য বা সমালোচনা করে এবং সেটির ফলে যদি আপনার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, তাহলে সেটি সাইবার বুলিং।
ট্যাগ/ মেনশন: কেউ যদি তার কোন বাজে পোস্টে বারবার আপনার অনুমতি ব্যতীত আপনার আইডিকে ট্যাগ করে কিংবা বাজে পোস্টে বারবার আপনাকে ইঙ্গিত করে বাজে কিছু বোঝানোর জন্য মেনশন করে সেটিও সাইবার বুলিং
গুজব: কেউ যদি আপনার সম্বন্ধে অযথা মজা করার ছলে হলেও আপনাকে মাত্রা তিক্ত ভাবে ছোট করে কিংবা আপনার সম্বন্ধে কোন গুজব রটায় সেটি ও সাইবার বুলিং।
মানসিক পরিবর্তন: কোন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত কোন ঘটনায় আপনার সাথে না করে শুধুমাত্র মেসেজে কিংবা কলে এমন কোন কথা বলে যে কথায় আপনি কষ্ট পান এবং যার ফলে আপনি ভালো থাকতে পারছেন না, আপনি মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্থ তাহলে সেটিও সাইবার বুলিং এর পর্যায়ে পড়ে ।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার বলতে গেলে সব প্রায় সবাই হতে পারে।কিন্তু নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদেরই বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে দেখা যায়। TheDailyStar এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সাইবার বুলিংয়ের হার অনেক বেশি এবং এই হার মেয়ে এবং মহিলাদের বেশি,যা প্রায় ৮০ শতাংশ। অর্থ্যাৎ সাইবার বুলিংয়ের জন্য মেয়েরাই বেশি টার্গেট হয়।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে বা অনলাইনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে -
সাইবার বুলিং এর শিকার ব্যাক্তি প্রচন্ড হীনম্নতাই ভুগতে থাকে।পড়ালেখা ও দৈনন্দিন যেকোনো কাজে সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে সাইবার বুলিং এ শিকার ব্যাক্তি একা চলাফেরা করে।
যেকোনো কাজের প্রতি তার অনিহা দেখা যায় এবং মানসিকভাবে সে বিষন্ন হয়ে পড়ে ও এক পর্যায়ে মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে।তাছাড়া সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে ভিক্টিম অনেক সময় বেঁচে থাকার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে । ফলসরূপ আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে থাকে।
বাংলাদেশে সাইবার বুলিং সম্পর্কিত একটি আইন রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যদি কেউ এই অপরাধ সংঘঠিত করে তবে তাকে ২ (বছর)বৎসর কারাদন্ডে বা অনধিক ৩লাখ টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয় ডন্ডে দন্ডিত হবে। নিচে সাইবার বুলিং আইনটি উল্লেখ করা হলো:
প্রস্তাবিত আইনের ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ও ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এইরূপ কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথাব মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করা বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা উদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য ওই ব্যক্তির এ ধরনের কাজ হবে একটি অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ২ (বছর)বৎসর কারাদন্ডে বা অনধিক ৩লাখ টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয় ডন্ডে দন্ডিত হবে।
এই ছিলো সাইবার বুলিং কি ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল আশা করি উপরের এই আর্টিকেল থেকে সাইবার বুলিং কি এর প্রভাব ও প্রতিরোধ সম্পর্কে মোটামুটি ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন।
সুত্র;ইন্টারনেট